ঢাকা ০৪:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাধবপুরে এক ভোটে পরাজয় দেখানো প্রার্থী ৫৩৩ ভোটে বিজয়ী

মাধবপুর প্রতিনিধিঃ

 

মাধবপুরে এক ভোটে পরাজয় দেখানো প্রার্থী ৫৩৩ ভোটে বিজয়ী ইউপি সদস্য নুরুল হাসান তপু শপথ নেবেন প্রায় তিন বছর পর। আগামী ১০ মার্চ উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের সদস্য নুরুল হাসানকে মাধবপুর নির্বাহী কর্মকর্তা জাহেদ বিন কাসেমের কাছে শপথ পাঠ করানোর জন্য চিঠি দিয়েছেন আদালত।
উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন দুইবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত জনপ্রিয় ইউপি সদস্য নুরুল হাসান। ভোট গণনায় কারচুপি করে তাকে এক ভোটে হারিয়ে দেওয়া হয়। এক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইসলাম উদ্দিনকে। পরাজিত দেখানো প্রার্থী ভোট পুনরায় গণনার আবেদন জানিয়ে হবিগঞ্জ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিলেন।

আদালত নানারকম তদন্ত যাচাই-বাছাই শেষে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে ভোট পুনরায় গণনার আদেশ দিয়েছিলেন। উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সিনিয়র সহকারী জজ সবুজ পালের আদালত কক্ষে পুনরায় ভোট গণনা করা হয়।
ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, এক ভোটে পরাজিত প্রার্থী নুরুল হাসান ৫৩৩ ভোটে বিজয়ী। দীর্ঘ সময়ের শুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, দলিল দস্তাবেসের যাচাই-বাছাইয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় জড়িত কর্মকর্তাদের নানা অসঙ্গতি ও ভোট কারচুপির ষড়যন্ত্র সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিনিয়র সহকারী জজ সবুজ পাল এক ভোটে বিজয়ী ঘোষিত প্রার্থী ইসলাম উদ্দিন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম, দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও কারচুপির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফকর উদ্দিনকে সন্দেহাতীতভাবে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর আদেশ দেন।
নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিনিয়র সহকারী জজ সবুজ পাল বিস্ময় প্রকাশ করে রায়ে উল্লেখ করেন, ৫৩৩ ভোট বেশি পাওয়া প্রার্থীকে এক ভোটে পরাজিত দেখানো হয়েছে। ভোট গণনায় মানবিক ভুল থাকা স্বাভাবিক হলেও, এত বিশাল ভোটের ব্যবধান কোনো স্বাভাবিক নয়।
আদালত তার রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও পুলিং অফিসার ফখরুদ্দিন মামুন, দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশে তার নিকটাত্মীয় ইসলাম উদ্দিনের পক্ষে চরম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী প্রার্থীকে পরাজিত করেন। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেন।
ইসলাম উদ্দিন নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক যুগ্ম জেলা জজ মিথিলা ইসলাম ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পূর্বিতা চাকমা গত ২ জুলাই আপিলের রায়ে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের দেওয়া ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখের রায় বহাল রাখেন। এ রায়ের বিপক্ষে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট স্থিতাবস্থা জারি করলে নুরুল হাসান সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রেজাউল হক উভয়পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে শুনানি শেষে নিম্ন আদালতের রায় হুবহু বহাল রাখেন। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে চূড়ান্তভাবে নুরুল হাসানকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রিয়াজুল হক নির্বাচনি ডাকাতিতে জড়িত সহকারী শিক্ষক ফখরুদ্দিন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম, পুলিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এখনো কেন ক্রিমিনাল মামলা হয়নি তা জানতে চান।
বিজয়ী ঘোষিত নুরুল হাসানের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, রাষ্ট্রের আইন-কানুন ও নির্বাচনি ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে দুর্নীতিবাজ চক্র ৫৩৩ ভোটে বিজয়ী প্রার্থীকে এক ভোটে পরাজিত দেখিয়েছেন। এটি আইন, রাষ্ট্র ও সংবিধানের প্রতি চরম ধৃষ্টতা। এরা একদিকে যেমন আমার মক্কেলকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন, অন্যদিকে রাষ্ট্রের আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছেন। নির্বাচনে আপিল বিভাগ ও বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ১১ ফেব্রুয়ারি নুরুল হাসানকে বিজয়ী ঘোষণা করে একটি গেজেট প্রকাশ করে। আপিল বিভাগও নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী সচিবালয়ের গেজেটে নুরুল হাসানের নাম-ঠিকানা সম্বলিত গেজেটের কপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পৌঁছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী অফিসার মো. জাহেদ বিন কাসেম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আগামী ১০ মার্চ উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে বিজয়ী নুরুল হাসানকে শপথ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
নুরুল হাসান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অন্যায়ভাবে জনগণের রায় পালটে দেওয়া হয়েছিল। সত্যের জয় হয়েছে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১১:০৩:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫
৫ বার পড়া হয়েছে

মাধবপুরে এক ভোটে পরাজয় দেখানো প্রার্থী ৫৩৩ ভোটে বিজয়ী

আপডেট সময় ১১:০৩:২৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ মার্চ ২০২৫

 

মাধবপুরে এক ভোটে পরাজয় দেখানো প্রার্থী ৫৩৩ ভোটে বিজয়ী ইউপি সদস্য নুরুল হাসান তপু শপথ নেবেন প্রায় তিন বছর পর। আগামী ১০ মার্চ উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের সদস্য নুরুল হাসানকে মাধবপুর নির্বাহী কর্মকর্তা জাহেদ বিন কাসেমের কাছে শপথ পাঠ করানোর জন্য চিঠি দিয়েছেন আদালত।
উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদে ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সদস্য পদপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন দুইবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত জনপ্রিয় ইউপি সদস্য নুরুল হাসান। ভোট গণনায় কারচুপি করে তাকে এক ভোটে হারিয়ে দেওয়া হয়। এক ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ইসলাম উদ্দিনকে। পরাজিত দেখানো প্রার্থী ভোট পুনরায় গণনার আবেদন জানিয়ে হবিগঞ্জ নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছিলেন।

আদালত নানারকম তদন্ত যাচাই-বাছাই শেষে উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে ভোট পুনরায় গণনার আদেশ দিয়েছিলেন। উভয়পক্ষের উপস্থিতিতে গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর সিনিয়র সহকারী জজ সবুজ পালের আদালত কক্ষে পুনরায় ভোট গণনা করা হয়।
ভোট গণনা শেষে দেখা যায়, এক ভোটে পরাজিত প্রার্থী নুরুল হাসান ৫৩৩ ভোটে বিজয়ী। দীর্ঘ সময়ের শুনানি, সাক্ষীদের জবানবন্দি, দলিল দস্তাবেসের যাচাই-বাছাইয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় জড়িত কর্মকর্তাদের নানা অসঙ্গতি ও ভোট কারচুপির ষড়যন্ত্র সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিনিয়র সহকারী জজ সবুজ পাল এক ভোটে বিজয়ী ঘোষিত প্রার্থী ইসলাম উদ্দিন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম, দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ও কারচুপির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফকর উদ্দিনকে সন্দেহাতীতভাবে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশন সচিব বরাবর আদেশ দেন।
নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের বিচারক সিনিয়র সহকারী জজ সবুজ পাল বিস্ময় প্রকাশ করে রায়ে উল্লেখ করেন, ৫৩৩ ভোট বেশি পাওয়া প্রার্থীকে এক ভোটে পরাজিত দেখানো হয়েছে। ভোট গণনায় মানবিক ভুল থাকা স্বাভাবিক হলেও, এত বিশাল ভোটের ব্যবধান কোনো স্বাভাবিক নয়।
আদালত তার রায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন, রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ও পুলিং অফিসার ফখরুদ্দিন মামুন, দায়িত্বরত প্রিসাইডিং অফিসার ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজহারুল ইসলামের সঙ্গে যোগসাজশে তার নিকটাত্মীয় ইসলাম উদ্দিনের পক্ষে চরম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে বিশাল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী প্রার্থীকে পরাজিত করেন। সরকারি কর্মকর্তা হয়ে নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুত সুষ্ঠু নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেন।
ইসলাম উদ্দিন নির্বাচনি ট্রাইব্যুনালের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক যুগ্ম জেলা জজ মিথিলা ইসলাম ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পূর্বিতা চাকমা গত ২ জুলাই আপিলের রায়ে সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের দেওয়া ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখের রায় বহাল রাখেন। এ রায়ের বিপক্ষে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। হাইকোর্ট স্থিতাবস্থা জারি করলে নুরুল হাসান সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রেজাউল হক উভয়পক্ষের আইনজীবীর উপস্থিতিতে শুনানি শেষে নিম্ন আদালতের রায় হুবহু বহাল রাখেন। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে চূড়ান্তভাবে নুরুল হাসানকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।
সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি রিয়াজুল হক নির্বাচনি ডাকাতিতে জড়িত সহকারী শিক্ষক ফখরুদ্দিন, উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম, পুলিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এখনো কেন ক্রিমিনাল মামলা হয়নি তা জানতে চান।
বিজয়ী ঘোষিত নুরুল হাসানের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, রাষ্ট্রের আইন-কানুন ও নির্বাচনি ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে দুর্নীতিবাজ চক্র ৫৩৩ ভোটে বিজয়ী প্রার্থীকে এক ভোটে পরাজিত দেখিয়েছেন। এটি আইন, রাষ্ট্র ও সংবিধানের প্রতি চরম ধৃষ্টতা। এরা একদিকে যেমন আমার মক্কেলকে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন, অন্যদিকে রাষ্ট্রের আইন-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চ্যালেঞ্জ করেছেন। নির্বাচনে আপিল বিভাগ ও বিজ্ঞ ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ১১ ফেব্রুয়ারি নুরুল হাসানকে বিজয়ী ঘোষণা করে একটি গেজেট প্রকাশ করে। আপিল বিভাগও নির্বাচন ট্রাইব্যুনালের রায় অনুযায়ী সচিবালয়ের গেজেটে নুরুল হাসানের নাম-ঠিকানা সম্বলিত গেজেটের কপি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে পৌঁছে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাহী অফিসার মো. জাহেদ বিন কাসেম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আগামী ১০ মার্চ উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে বিজয়ী নুরুল হাসানকে শপথ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
নুরুল হাসান তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, অন্যায়ভাবে জনগণের রায় পালটে দেওয়া হয়েছিল। সত্যের জয় হয়েছে।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/dainikprohor/public_html/wp-includes/functions.php on line 5464