ঢাকা ০৮:০৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মব কালচার মানুষের মধ্যে ভয় আতংক তৈরি করে রেখেছে: মৌঃবাহারে রুহুল কবির রিজভী

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

মব কালচা

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, মব কালচার মানুষের মধ্যে ভয় আতংক তৈরি করে রেখেছে। কেউ অপরাধ করলে আইনের হাতে তুলে দিবেন। একটা মব তৈরি করে উশৃংখল জনতা সংঘটিত হয়ে অপরাধীর ওপর আক্রমন করছেন। বিনা বিচারে কাউকে তো অপরাধী প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। এটা তো আইনের বিধান। আর যদি দেখেন চাক্ষুষ তাহলে পুলিশ কে খবর দেন। না হয় তাকে গিয়ে ধরে পুলিশের হাতে দেন। কিন্তু মব তৈরি করে তাকে বেধরক পিটানো এটাতো অপরাধের মধ্যে পরে। পাচঁই আগস্টের পরে মব কালচার এতো বেশি তীব্র আকার ধারণ করলো কেন? এখানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা কোথায়? এটা তো মানুষ আজ জানতে চায়। আজকে মানুষের মধ্যে যে আতংক তৈরি হয়েছে এ মব কালচারের নামে। কেউ হয়তো বলে দিল একটা নীরিহ ছেলেটা চুরি করেছে, হঠাৎ উচ্ছৃঙ্খল জনতা তার ওপর আক্রমণ করে তাকে মেরেই ফেললো। এটা হচ্ছে, প্রায় জায়গায় হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুরে মৌলভীবাজারের সাইফুর রহমান অডিটোরিয়ামে জেলা বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মব কালচারের কারণে দেশে আজ স্বামী স্ত্রী সন্তান সহ হত্যা করা হচ্ছে। প্রতিদিন বিভৎস হত্যকান্ড ঘটছে। এটাতো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা করে না। মানুষ প্রত্যাশা করে শেখ হাসিনার সেই দু: শাসন, সেই কালো কানুন, সেই ভয়াবহ অবস্থার সন্তান কে তার মায়ের কাছ থেকে তুলে নিয়ে গেছে, স্বামী কে তার স্ত্রীর কাছ থেকে তুলে নিয়ে গেছে। অদৃশ্য করে দিয়েছে, গুম করেছে এখন পর্যন্ত কোন হদিস নাই। এই সিলেটের ইলিয়াস আলী যে এমপি ছিল ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিল যে জাতীয় নেতা সে আজ কোথায় কোন অবস্থায় আছে তার কোন হদিস নাই। তার কোন মৃত্যু বার্ষিকী পালন করতে পারবে কি পারবে না সেটারও কোনো বলা যায় না সে বেচেঁ আছে না মারা গেছে। আরও অনেক ছাত্র তরুনকে গুম করা হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতো এখন তৈরি হতে পারে না। মানুষ এখন অনেকটা শান্তি ও স্বস্তি পাচ্ছে কিন্তু এর মধ্যে তো স্বাভাবিক অনাচার বাড়ছে। পুরোনো অবস্থাই রয়েছে এই প্রশাসনিক ব্যবস্থা।
রিজভী বলেন, আমরা যতই যে আইন করি না কেন যে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব গুলো খবরের কাগজে দেখছি, কিন্তু সব কিছু করার পরের যদি ফ্যাসিস্ট ক্ষমতায় আসে চেতনাধারী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট হোক,ধর্মের নামধারী কোন ফ্যাসিস্ট হোক সে এসে সংবিধান থেকে কি দুমড়ে মুচড়ে ফেলতে পারে না। হাসিনা করেনি। হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে যে সংবিধান ছিল সেটা কি রেখেছিল? ২০১৮ সালের আগে শেখ হাসিনা বিরোধী দলের একজন ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনে রেখেছিল কিন্তু ২০১৮ নির্বাচনে আমরা কি দেখলাম সকালের ভোট বিকেলের ভোট চলে গেছে ভোটের আগের রাত্রে ৮টার সময় নয়টার সময়, দশটার সময়, ১১ টার সময়, ১২ টার সময়। দিনের ভোট রাত্রে হল। অথচ নির্বাচন কমিশনে বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনীত একজন ব্যক্তি কমিশনে ছিল। তার যে আইন করবেন এই আইনের মধ্যদিয়ে হয়তো উন্নত তর ব্যবস্থা হবে কিন্তু তার পরেও যদি যে সমস্ত ব্যক্তিরা মনোনীত হবে তাদের মন যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে কি করবেন। এটারও তো একটা বিধান থাকতে হবে। ধরেন একজন কে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে হল কিন্তু ওই নির্বাচন কমিশনের মধ্যে একজন কমিশনার তিনি একটা চেতনা ধারণ করেন তাকে তার দল বলে দিল তুমি কখনোই মানবে না যদি ওল্টা পাল্টা হয় আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে। সুতরাং খুব সুচিন্তিত ভাবে আইন প্রণয়ন করতে হবে। এবং সবাই কে সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
তিনি আরো বলেন, একটা অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সংবিধানে সংবিধানে বিধানগুলোও সংযোজিত হবে সেই বিধানের ভিত্তিতে যে নির্বাচন কমিশন হবে সেটা অনেক নিরপেক্ষ হতে হবে। এর সাথে এ বিধানও থাকা দরকার যারা কমিশনার নিযুক্ত হবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ তাদের নিউট্যালিটি তার নিরপেক্ষতা যেন অক্ষুন্ন থাকে। তিনি যেন আল্লাহ কে ভয় পেয়ে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করেন। কোন দল কোনো চেতনার ওপর নির্ভর করে না করেন। এটা যদি না হয় আমরা আবারও পিছনে থাকবো। আবারও নানা ফাঁক দিয়ে নানা ছিদ্র পথ দিয়ে গনতন্ত্র বিরোধী সর্বনাশা শক্তি সেই শক্তির পুনরুত্থান ঘটতে পারে। এজন্য যা কিছু দরকার এমুহুর্তেই করতে হবে। তবে এটা যদি নানা অজুহাতে লম্বা সময় নেন তাহলে কিন্তু ভালো ফল পাওয়া যাবে না।
রিজভী বলেন, আজ আমরা শুনি যে, সরকারের মধ্যে অনেক উপদেষ্টা রয়েছেন তারা নাকি ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে চাচ্ছেন। তারা তাদের লোকজনদেরকে দিয়ে এটা বলাচ্ছেন ফেসবুক স্যোসাল মিডিয়া স্বাভাবিক গণমাধ্যমে বলছেন – তিন বছর থাকা উচিত এই সরকারের পাঁচ বছর থাকা উচিত। এগুলো বলাচ্ছেন নানা ভাবে না কায়দায়। কারা বলাচ্ছেন এটা আমরা সবাই জানি। এটা বলে গনতন্ত্রের ক্ষতি করছেন।
তিনি বলেন, সকল রাজনৈতিক দল যারা সংগ্রামে ছিল আন্দোলনে ছিল এবং এবং এরা বুকচিতিয়ে দাঁড়িয়েছে শেখ হাসিনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তাদের সমর্থিত সরকার হচ্ছে ডক্টর ইউনুসের সরকার। সেই খানে এতো দ্বিধা এতো দ্বন্ধ কেন? কোনও কোনও উপদেষ্টার খায়েশ থাকতে পারে ডক্টর ইউনুস সাহেব তো আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মানুষ। গুণীজন মানুষ। সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ। তাকে তো জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী আকাঙ্খা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। কারণ আপনি হয়তো ভালো মানুষ কিন্তু আপনার আরও যারা আছে তারা হয়তো নানান বিষয় থাকতে পারে। তা না হলে আজকে সচিবালয়ের ভিতরে ছাত্রলীগ স্লোগান দেয় কি করে? গোপালগঞ্জে আক্রমন করে কি করে? যার আন্দোলনের পক্ষে ছিল তাদের ওপর। তাহলে নিশ্চয়ই কেউ ডিমে যেমন তা দিয়ে মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করে এরকম কেউ না কেউ তা দিচ্ছে। সরকারের ভিতর থেকে বা ক্ষমতাসীন মহলের ভিতর থেকে এসব দেয়া হচ্ছে।
রিজভী বলেন, অনেক বিতর্কিত লোককে উপদেষ্টা পরিষদে মধ্যে রাখা হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে যাদের ভুমিকা ছিল অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। ঢালও বলবো না অনেকই নানা লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। কিন্তু দুই একজনকে রাখা হয়েছে যাদের কোনও না কোনও ভাবে হাসিনার সাথে বা হাসিনার রেজিমের সাথে সম্পৃক্ত। আমি নাম বলতে চাই না। তাহলে এর পরে আপনি কী করে আইনের শাসন নিশ্চিত করবেন রুল অফ ল- ন্যায় বিচার । ন্যায় বিচার তো নিশ্চিত করা সম্বব না। যে ন্যায় বিচার ধ্বংস করে দিয়ে গেছে খায়রুল হক। এজন্য ধন্যবাদ জানাই ডক্টর ইউনুস সরকারকে। এতোদিন পরে একটি কাজের মতো কাজ করেছেন অন্তর্বর্তী কালীন সরকার। যে গনতন্ত্র ধ্বংস করেছে। যে উচ্চ আদালত ধ্বংস করেছে। ন্যায় বিচার ধ্বংস করেছে। যে তত্বাবধায়ক সরকার মুছে দিয়েছে। যে দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটিয়েছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, যার দৃষ্টান্তমূলক শান্তি হওয়া দরকার। গোটা দেশকে সেই হাসিনার মতো এক রক্তপিপাসু রাক্ষসীর কাছে একেবারে উপহার হিসাবে তুলে দিয়েছেন, কেন তুলে দিয়েছেন তিন চার জন তার উপরে সিনিয়র জাজ কে ডিঙিয়ে খায়রুল হককে প্রধান বিচারপতি করেছিলেন শেখ হাসিনা। এই কারণে উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন এক ভয়ংকর ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা। তার সবার আগে গ্রেফতার হওয়া উচিত ছিল। দেরী হলেও তাকে গ্রেফতার করেছেন এই কারণে ডক্টর ইউনুস কে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। এই ধরনের সত্যিকার অর্থেই যারা দুর্বৃত্ত তাদের বিচার হোক। যাতে আর কোন দিন নতুন করে গনতন্ত্র বিরোধী কোনো ধরনের আইন প্রণয়ন করতে না পারে। কেউ কোন বিচারপতি কোন আদালত বা প্রশাসনের কোন প্রতিষ্ঠান কেউ যেন ফ্যাসিবাদের পক্ষে কাজ করে কোন ফ্যাসিবাদকে পুণরায় পূর্ণরুজীবিত করার চেষ্টা না করে।
বিএনপির সদস্য কারা হবেন এবিষয়ে রিজভী বলেন, আগে যারা সদস্য ছিলেন তারা হবেন। সমাজে যারা ভালো মানুষ ভদ্রলোক, যাদেরকে মানুষ দেখলে সম্মান করে শ্রদ্ধা করে এরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ। নিরানব্বই পারসেন্ট মানুষ তারা। তারাই সদস্য হবেন। আর দূর্বৃত্ত অনাচারকারি চাঁদাবাজ দখলবাজ বিএনপির সদস্য হতে পারবে না। আর এই জেলার যিনি অভিভাবকত্ব করেছেন শুধু এ জেলার নয় সারা জাতির যিনি অভিভাবকত্ব করেছেন যে আধুনিক অর্থনীতির ব্যবস্থা দিয়ে এ জাতিকে নিজের পায়ে গড়ে তোলার জন্য শহীদ জিয়ার সহকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন সেই সাইফুর রহমানের জেলায় আমি মনে করি মিনিমাম দেড় থেকে দুই লক্ষ মানুষ বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদ হবে।
তিনি বলেন- আমাদের প্রাথমিক সদস্যর হওয়ার ব্যাপারে আমরা একটা টার্গেট দিয়েছে কম পক্ষে এক কোটি। যদি আরও বেশি হয় ভালো। আমাদের দলে যারা সদস্য হবেন ১৮ বছর বয়স্ক তাদের সংখ্যা তো কম নয়। যারা ভোটার হতে পারেন নি। স্কুলের শিক্ষক কলেজের শিক্ষক মারাসার শিক্ষক রিটায়ার্ড সরকারি কর্মকর্তা রিটায়ার্ড বেসরকারি কর্মকর্তা এবং যারা চাকরি করেও চাকরি করেও অনেক প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি করার সুযোগ আছে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়,বেসরকারি কলেজের শিক্ষক এসমস্ত মানুষদেরকে টার্গেট করতে হবে। আপনারর কৃষকদেরকে টার্গেট করবেন। আমাদের মেরুদণ্ড যারা। আপনারা শ্রমিকদেরকে টার্গেট করেন। রিক্সাওয়ালাদেরকে টার্গেট করেন। এরা পরিশ্রম করে খায়। এরা সমাজের সব চাইতে যোগ্য মানুষ। এরাই হবে বিএনপির সদস্য। এরাই হবে মূল শক্তি। আর যুবদল, ছাত্রদল ও অঙ্গসংগঠনের কেউ সদস্য হতে পারবেন না। কারণ তাদের নিজস্ব সংগঠন আছে। তারা নিজের সংগঠনের সদস্য হবেন। কিন্তু যারা ইতিমধ্যে অংগসংগঠন ছেড়ে দিয়েছেন অন্য কোন কমিটির মধ্যে নেই তারা সদস্য হতে পারবেন। এ নিয়ে জেলায় জেলায় সার্কুলার দিয়েছি।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগের ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের যে কোন পদ পদবীতে আছেন এমন কাউকে প্রাথমিক সদস্য করা যাবে না। যারা বিতর্কিত তাদেরকেও বিএনপির সদস্যপদ দেয়া যাবে না। যারা চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, লুটপাটকারী, দুর্নীতিবাজ ও গুন্ডা-মাস্তান তাদেরকেও অন্তভূক্ত করা যাবে না। এসব লোককে যে বা যারা স্বাক্ষর করে সদস্য করবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপনের সঞ্চালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জি কে গউছ, সহ-সাংগঠনিক মিফতাহ সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি এম নাসের রহমান, জাসাসের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলা নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির টিম প্রধান সৈয়দ আশরাফুল মজিদ খোকন।

অনুষ্ঠানে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম নাসের রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন, সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন, সদস্য মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী, আব্দুল মুকিত, মিজানুর রহমান মিজান-এর সদস্য পদ নবায়নের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রুহুল কবির রিজভী।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৫:২৯:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
১০ বার পড়া হয়েছে

মব কালচার মানুষের মধ্যে ভয় আতংক তৈরি করে রেখেছে: মৌঃবাহারে রুহুল কবির রিজভী

আপডেট সময় ০৫:২৯:৫৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

মব কালচা

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, মব কালচার মানুষের মধ্যে ভয় আতংক তৈরি করে রেখেছে। কেউ অপরাধ করলে আইনের হাতে তুলে দিবেন। একটা মব তৈরি করে উশৃংখল জনতা সংঘটিত হয়ে অপরাধীর ওপর আক্রমন করছেন। বিনা বিচারে কাউকে তো অপরাধী প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাবে না। এটা তো আইনের বিধান। আর যদি দেখেন চাক্ষুষ তাহলে পুলিশ কে খবর দেন। না হয় তাকে গিয়ে ধরে পুলিশের হাতে দেন। কিন্তু মব তৈরি করে তাকে বেধরক পিটানো এটাতো অপরাধের মধ্যে পরে। পাচঁই আগস্টের পরে মব কালচার এতো বেশি তীব্র আকার ধারণ করলো কেন? এখানে প্রশাসনিক ব্যবস্থা কোথায়? এটা তো মানুষ আজ জানতে চায়। আজকে মানুষের মধ্যে যে আতংক তৈরি হয়েছে এ মব কালচারের নামে। কেউ হয়তো বলে দিল একটা নীরিহ ছেলেটা চুরি করেছে, হঠাৎ উচ্ছৃঙ্খল জনতা তার ওপর আক্রমণ করে তাকে মেরেই ফেললো। এটা হচ্ছে, প্রায় জায়গায় হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুরে মৌলভীবাজারের সাইফুর রহমান অডিটোরিয়ামে জেলা বিএনপির নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়নের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, মব কালচারের কারণে দেশে আজ স্বামী স্ত্রী সন্তান সহ হত্যা করা হচ্ছে। প্রতিদিন বিভৎস হত্যকান্ড ঘটছে। এটাতো অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা করে না। মানুষ প্রত্যাশা করে শেখ হাসিনার সেই দু: শাসন, সেই কালো কানুন, সেই ভয়াবহ অবস্থার সন্তান কে তার মায়ের কাছ থেকে তুলে নিয়ে গেছে, স্বামী কে তার স্ত্রীর কাছ থেকে তুলে নিয়ে গেছে। অদৃশ্য করে দিয়েছে, গুম করেছে এখন পর্যন্ত কোন হদিস নাই। এই সিলেটের ইলিয়াস আলী যে এমপি ছিল ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ছিল যে জাতীয় নেতা সে আজ কোথায় কোন অবস্থায় আছে তার কোন হদিস নাই। তার কোন মৃত্যু বার্ষিকী পালন করতে পারবে কি পারবে না সেটারও কোনো বলা যায় না সে বেচেঁ আছে না মারা গেছে। আরও অনেক ছাত্র তরুনকে গুম করা হয়েছে। সেই পরিস্থিতিতো এখন তৈরি হতে পারে না। মানুষ এখন অনেকটা শান্তি ও স্বস্তি পাচ্ছে কিন্তু এর মধ্যে তো স্বাভাবিক অনাচার বাড়ছে। পুরোনো অবস্থাই রয়েছে এই প্রশাসনিক ব্যবস্থা।
রিজভী বলেন, আমরা যতই যে আইন করি না কেন যে নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রস্তাব গুলো খবরের কাগজে দেখছি, কিন্তু সব কিছু করার পরের যদি ফ্যাসিস্ট ক্ষমতায় আসে চেতনাধারী আওয়ামী ফ্যাসিস্ট হোক,ধর্মের নামধারী কোন ফ্যাসিস্ট হোক সে এসে সংবিধান থেকে কি দুমড়ে মুচড়ে ফেলতে পারে না। হাসিনা করেনি। হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরে যে সংবিধান ছিল সেটা কি রেখেছিল? ২০১৮ সালের আগে শেখ হাসিনা বিরোধী দলের একজন ব্যক্তিকে নির্বাচন কমিশনে রেখেছিল কিন্তু ২০১৮ নির্বাচনে আমরা কি দেখলাম সকালের ভোট বিকেলের ভোট চলে গেছে ভোটের আগের রাত্রে ৮টার সময় নয়টার সময়, দশটার সময়, ১১ টার সময়, ১২ টার সময়। দিনের ভোট রাত্রে হল। অথচ নির্বাচন কমিশনে বিএনপির পক্ষ থেকে মনোনীত একজন ব্যক্তি কমিশনে ছিল। তার যে আইন করবেন এই আইনের মধ্যদিয়ে হয়তো উন্নত তর ব্যবস্থা হবে কিন্তু তার পরেও যদি যে সমস্ত ব্যক্তিরা মনোনীত হবে তাদের মন যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে কি করবেন। এটারও তো একটা বিধান থাকতে হবে। ধরেন একজন কে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে হল কিন্তু ওই নির্বাচন কমিশনের মধ্যে একজন কমিশনার তিনি একটা চেতনা ধারণ করেন তাকে তার দল বলে দিল তুমি কখনোই মানবে না যদি ওল্টা পাল্টা হয় আমাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে। সুতরাং খুব সুচিন্তিত ভাবে আইন প্রণয়ন করতে হবে। এবং সবাই কে সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
তিনি আরো বলেন, একটা অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য সংবিধানে সংবিধানে বিধানগুলোও সংযোজিত হবে সেই বিধানের ভিত্তিতে যে নির্বাচন কমিশন হবে সেটা অনেক নিরপেক্ষ হতে হবে। এর সাথে এ বিধানও থাকা দরকার যারা কমিশনার নিযুক্ত হবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ তাদের নিউট্যালিটি তার নিরপেক্ষতা যেন অক্ষুন্ন থাকে। তিনি যেন আল্লাহ কে ভয় পেয়ে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালন করেন। কোন দল কোনো চেতনার ওপর নির্ভর করে না করেন। এটা যদি না হয় আমরা আবারও পিছনে থাকবো। আবারও নানা ফাঁক দিয়ে নানা ছিদ্র পথ দিয়ে গনতন্ত্র বিরোধী সর্বনাশা শক্তি সেই শক্তির পুনরুত্থান ঘটতে পারে। এজন্য যা কিছু দরকার এমুহুর্তেই করতে হবে। তবে এটা যদি নানা অজুহাতে লম্বা সময় নেন তাহলে কিন্তু ভালো ফল পাওয়া যাবে না।
রিজভী বলেন, আজ আমরা শুনি যে, সরকারের মধ্যে অনেক উপদেষ্টা রয়েছেন তারা নাকি ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে চাচ্ছেন। তারা তাদের লোকজনদেরকে দিয়ে এটা বলাচ্ছেন ফেসবুক স্যোসাল মিডিয়া স্বাভাবিক গণমাধ্যমে বলছেন – তিন বছর থাকা উচিত এই সরকারের পাঁচ বছর থাকা উচিত। এগুলো বলাচ্ছেন নানা ভাবে না কায়দায়। কারা বলাচ্ছেন এটা আমরা সবাই জানি। এটা বলে গনতন্ত্রের ক্ষতি করছেন।
তিনি বলেন, সকল রাজনৈতিক দল যারা সংগ্রামে ছিল আন্দোলনে ছিল এবং এবং এরা বুকচিতিয়ে দাঁড়িয়েছে শেখ হাসিনার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে তাদের সমর্থিত সরকার হচ্ছে ডক্টর ইউনুসের সরকার। সেই খানে এতো দ্বিধা এতো দ্বন্ধ কেন? কোনও কোনও উপদেষ্টার খায়েশ থাকতে পারে ডক্টর ইউনুস সাহেব তো আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মানুষ। গুণীজন মানুষ। সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ। তাকে তো জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী আকাঙ্খা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। কারণ আপনি হয়তো ভালো মানুষ কিন্তু আপনার আরও যারা আছে তারা হয়তো নানান বিষয় থাকতে পারে। তা না হলে আজকে সচিবালয়ের ভিতরে ছাত্রলীগ স্লোগান দেয় কি করে? গোপালগঞ্জে আক্রমন করে কি করে? যার আন্দোলনের পক্ষে ছিল তাদের ওপর। তাহলে নিশ্চয়ই কেউ ডিমে যেমন তা দিয়ে মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করে এরকম কেউ না কেউ তা দিচ্ছে। সরকারের ভিতর থেকে বা ক্ষমতাসীন মহলের ভিতর থেকে এসব দেয়া হচ্ছে।
রিজভী বলেন, অনেক বিতর্কিত লোককে উপদেষ্টা পরিষদে মধ্যে রাখা হয়েছে। শেখ হাসিনার আমলে যাদের ভুমিকা ছিল অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। ঢালও বলবো না অনেকই নানা লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। কিন্তু দুই একজনকে রাখা হয়েছে যাদের কোনও না কোনও ভাবে হাসিনার সাথে বা হাসিনার রেজিমের সাথে সম্পৃক্ত। আমি নাম বলতে চাই না। তাহলে এর পরে আপনি কী করে আইনের শাসন নিশ্চিত করবেন রুল অফ ল- ন্যায় বিচার । ন্যায় বিচার তো নিশ্চিত করা সম্বব না। যে ন্যায় বিচার ধ্বংস করে দিয়ে গেছে খায়রুল হক। এজন্য ধন্যবাদ জানাই ডক্টর ইউনুস সরকারকে। এতোদিন পরে একটি কাজের মতো কাজ করেছেন অন্তর্বর্তী কালীন সরকার। যে গনতন্ত্র ধ্বংস করেছে। যে উচ্চ আদালত ধ্বংস করেছে। ন্যায় বিচার ধ্বংস করেছে। যে তত্বাবধায়ক সরকার মুছে দিয়েছে। যে দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় জেল খাটিয়েছে।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, যার দৃষ্টান্তমূলক শান্তি হওয়া দরকার। গোটা দেশকে সেই হাসিনার মতো এক রক্তপিপাসু রাক্ষসীর কাছে একেবারে উপহার হিসাবে তুলে দিয়েছেন, কেন তুলে দিয়েছেন তিন চার জন তার উপরে সিনিয়র জাজ কে ডিঙিয়ে খায়রুল হককে প্রধান বিচারপতি করেছিলেন শেখ হাসিনা। এই কারণে উপহার হিসাবে দিয়েছিলেন এক ভয়ংকর ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা। তার সবার আগে গ্রেফতার হওয়া উচিত ছিল। দেরী হলেও তাকে গ্রেফতার করেছেন এই কারণে ডক্টর ইউনুস কে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই। এই ধরনের সত্যিকার অর্থেই যারা দুর্বৃত্ত তাদের বিচার হোক। যাতে আর কোন দিন নতুন করে গনতন্ত্র বিরোধী কোনো ধরনের আইন প্রণয়ন করতে না পারে। কেউ কোন বিচারপতি কোন আদালত বা প্রশাসনের কোন প্রতিষ্ঠান কেউ যেন ফ্যাসিবাদের পক্ষে কাজ করে কোন ফ্যাসিবাদকে পুণরায় পূর্ণরুজীবিত করার চেষ্টা না করে।
বিএনপির সদস্য কারা হবেন এবিষয়ে রিজভী বলেন, আগে যারা সদস্য ছিলেন তারা হবেন। সমাজে যারা ভালো মানুষ ভদ্রলোক, যাদেরকে মানুষ দেখলে সম্মান করে শ্রদ্ধা করে এরাই সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষ। নিরানব্বই পারসেন্ট মানুষ তারা। তারাই সদস্য হবেন। আর দূর্বৃত্ত অনাচারকারি চাঁদাবাজ দখলবাজ বিএনপির সদস্য হতে পারবে না। আর এই জেলার যিনি অভিভাবকত্ব করেছেন শুধু এ জেলার নয় সারা জাতির যিনি অভিভাবকত্ব করেছেন যে আধুনিক অর্থনীতির ব্যবস্থা দিয়ে এ জাতিকে নিজের পায়ে গড়ে তোলার জন্য শহীদ জিয়ার সহকর্মী হিসেবে কাজ করেছেন সেই সাইফুর রহমানের জেলায় আমি মনে করি মিনিমাম দেড় থেকে দুই লক্ষ মানুষ বিএনপির প্রাথমিক সদস্য পদ হবে।
তিনি বলেন- আমাদের প্রাথমিক সদস্যর হওয়ার ব্যাপারে আমরা একটা টার্গেট দিয়েছে কম পক্ষে এক কোটি। যদি আরও বেশি হয় ভালো। আমাদের দলে যারা সদস্য হবেন ১৮ বছর বয়স্ক তাদের সংখ্যা তো কম নয়। যারা ভোটার হতে পারেন নি। স্কুলের শিক্ষক কলেজের শিক্ষক মারাসার শিক্ষক রিটায়ার্ড সরকারি কর্মকর্তা রিটায়ার্ড বেসরকারি কর্মকর্তা এবং যারা চাকরি করেও চাকরি করেও অনেক প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি করার সুযোগ আছে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়,বেসরকারি কলেজের শিক্ষক এসমস্ত মানুষদেরকে টার্গেট করতে হবে। আপনারর কৃষকদেরকে টার্গেট করবেন। আমাদের মেরুদণ্ড যারা। আপনারা শ্রমিকদেরকে টার্গেট করেন। রিক্সাওয়ালাদেরকে টার্গেট করেন। এরা পরিশ্রম করে খায়। এরা সমাজের সব চাইতে যোগ্য মানুষ। এরাই হবে বিএনপির সদস্য। এরাই হবে মূল শক্তি। আর যুবদল, ছাত্রদল ও অঙ্গসংগঠনের কেউ সদস্য হতে পারবেন না। কারণ তাদের নিজস্ব সংগঠন আছে। তারা নিজের সংগঠনের সদস্য হবেন। কিন্তু যারা ইতিমধ্যে অংগসংগঠন ছেড়ে দিয়েছেন অন্য কোন কমিটির মধ্যে নেই তারা সদস্য হতে পারবেন। এ নিয়ে জেলায় জেলায় সার্কুলার দিয়েছি।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আওয়ামীলীগের ও তার অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের যে কোন পদ পদবীতে আছেন এমন কাউকে প্রাথমিক সদস্য করা যাবে না। যারা বিতর্কিত তাদেরকেও বিএনপির সদস্যপদ দেয়া যাবে না। যারা চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস, লুটপাটকারী, দুর্নীতিবাজ ও গুন্ডা-মাস্তান তাদেরকেও অন্তভূক্ত করা যাবে না। এসব লোককে যে বা যারা স্বাক্ষর করে সদস্য করবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপনের সঞ্চালনায় প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির কোষাধ্যক্ষ এম রশিদুজ্জামান মিল্লাত। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ) জি কে গউছ, সহ-সাংগঠনিক মিফতাহ সিদ্দিকী, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সাবেক এমপি এম নাসের রহমান, জাসাসের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও মৌলভীবাজার জেলা নতুন সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির টিম প্রধান সৈয়দ আশরাফুল মজিদ খোকন।

অনুষ্ঠানে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এম নাসের রহমান, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফয়জুল করিম ময়ূন, সদস্য সচিব আব্দুর রহিম রিপন, সদস্য মৌলভী আব্দুল ওয়ালী সিদ্দিকী, আব্দুল মুকিত, মিজানুর রহমান মিজান-এর সদস্য পদ নবায়নের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রুহুল কবির রিজভী।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/dainikprohor/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471