ঢাকা ০৯:৫২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

কুলাউড়ায় স্কুলছাত্রী নাফিসা হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন: ঘাতক গ্রেপ্তার।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

 

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় স্কুলছাত্রী নাফিসা জান্নাত আনজুম (১৫) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ভিকটিমের প্রতিবেশী মো. জুনেল মিয়াকে (৩৯) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে তার দেখানো মতে ঘটনাস্থল সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নিহতের বোরখা, স্কুলব্যাগ, বই ও একটি জুতা।
নিখোঁজের দুই দিন পর উদ্ধার হয় মরদেহ।
গত ১২ জুন সকালে সিংগুর গ্রামে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয় কুলাউড়া উপজেলার নাফিসা। এ ঘটনায় কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পরবর্তীতে ১৪ জুন বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে বাড়ির পাশের একটি ছড়ার পাশে দূর্গন্ধ পেয়ে নাফিসার ভাই ও মামা মরদেহটি অর্ধগলিত অবস্থায় খুঁজে পান। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়।
তদন্তে নামে বিশেষ পুলিশ টিম
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা, কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আজমল হোসেন, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম আফসার এবং পুলিশ পরিদর্শক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যসহ একটি বিশেষ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপর দ্রুত রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে কয়েকটি তদন্তকারী দল গঠন করা হয়।
প্রযুক্তির সহায়তায় ধরা পড়ে ঘাতক।
তদন্তকালে ভিকটিমের স্কুল ব্যাগ, বই ও জুতা ঘটনাস্থলের পাশে ঝোপ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গঠন করা হয় ৬টি বিশেষ টিম। নারী সংক্রান্ত বিষয় ও কিছু আলামতের ভিত্তিতে সন্দেহবশত জুনেল মিয়াকে আটক করা হয়। তার মোবাইল ফোনে পর্ন সাইট ব্রাউজের তথ্য পাওয়ার পর সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। এরপর দুপুর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পুলিশের সামনে হত্যার কথা স্বীকার করে জুনেল।
হত্যাকাণ্ডের বিবরণ-
আসামি জানায়, ভিকটিম প্রায়ই তার বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে স্কুল ও প্রাইভেটে যাতায়াত করত। সেদিন (১২ জুন) প্রাইভেট শেষে ফিরছিল নাফিসা। সকাল আনুমানিক ১০:৩০টায় জুনেল তার পিছু নেয় এবং কথা বলার চেষ্টা করে। নাফিসা কথা বলতে না চাইলে, জুনেল পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে। চিৎকার করলে সে গলা চেপে ধরে, এতে নাফিসা অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর তাকে কিরিম শাহ মাজারের পাশে ছড়ার পাড়ে একটি ঝোপে ফেলে রেখে আসে।

নিহত স্কুলছাত্রীর বোরখা ঘটনাস্থলের পাশের একটি কবরস্থানের দেয়ালের বাইরে ছুড়ে ফেলে দেয় জুনেল। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে পুলিশ সেটি উদ্ধার করে।

পুলিশ সুপারের প্রতিশ্রুতি

ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও আলামত উদ্ধার করায় পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ জানিয়েছে, এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুততার সঙ্গে নিশ্চিত করতে সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৩:২২:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫
২ বার পড়া হয়েছে

কুলাউড়ায় স্কুলছাত্রী নাফিসা হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন: ঘাতক গ্রেপ্তার।

আপডেট সময় ০৩:২২:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৬ জুন ২০২৫

 

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় স্কুলছাত্রী নাফিসা জান্নাত আনজুম (১৫) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে জেলা পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ভিকটিমের প্রতিবেশী মো. জুনেল মিয়াকে (৩৯) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে তার দেখানো মতে ঘটনাস্থল সংলগ্ন এলাকা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে নিহতের বোরখা, স্কুলব্যাগ, বই ও একটি জুতা।
নিখোঁজের দুই দিন পর উদ্ধার হয় মরদেহ।
গত ১২ জুন সকালে সিংগুর গ্রামে প্রাইভেট পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয় কুলাউড়া উপজেলার নাফিসা। এ ঘটনায় কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। পরবর্তীতে ১৪ জুন বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে বাড়ির পাশের একটি ছড়ার পাশে দূর্গন্ধ পেয়ে নাফিসার ভাই ও মামা মরদেহটি অর্ধগলিত অবস্থায় খুঁজে পান। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। ভিকটিমের পরিবারের অভিযোগের ভিত্তিতে থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করা হয়।
তদন্তে নামে বিশেষ পুলিশ টিম
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) নোবেল চাকমা, কুলাউড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আজমল হোসেন, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ গোলাম আফসার এবং পুলিশ পরিদর্শক সুদীপ্ত ভট্টাচার্যসহ একটি বিশেষ টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এরপর দ্রুত রহস্য উদঘাটনের লক্ষ্যে কয়েকটি তদন্তকারী দল গঠন করা হয়।
প্রযুক্তির সহায়তায় ধরা পড়ে ঘাতক।
তদন্তকালে ভিকটিমের স্কুল ব্যাগ, বই ও জুতা ঘটনাস্থলের পাশে ঝোপ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। স্থানীয়দের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গঠন করা হয় ৬টি বিশেষ টিম। নারী সংক্রান্ত বিষয় ও কিছু আলামতের ভিত্তিতে সন্দেহবশত জুনেল মিয়াকে আটক করা হয়। তার মোবাইল ফোনে পর্ন সাইট ব্রাউজের তথ্য পাওয়ার পর সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়। এরপর দুপুর থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে পুলিশের সামনে হত্যার কথা স্বীকার করে জুনেল।
হত্যাকাণ্ডের বিবরণ-
আসামি জানায়, ভিকটিম প্রায়ই তার বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে স্কুল ও প্রাইভেটে যাতায়াত করত। সেদিন (১২ জুন) প্রাইভেট শেষে ফিরছিল নাফিসা। সকাল আনুমানিক ১০:৩০টায় জুনেল তার পিছু নেয় এবং কথা বলার চেষ্টা করে। নাফিসা কথা বলতে না চাইলে, জুনেল পেছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে। চিৎকার করলে সে গলা চেপে ধরে, এতে নাফিসা অচেতন হয়ে পড়ে। এরপর তাকে কিরিম শাহ মাজারের পাশে ছড়ার পাড়ে একটি ঝোপে ফেলে রেখে আসে।

নিহত স্কুলছাত্রীর বোরখা ঘটনাস্থলের পাশের একটি কবরস্থানের দেয়ালের বাইরে ছুড়ে ফেলে দেয় জুনেল। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্থানীয়দের উপস্থিতিতে পুলিশ সেটি উদ্ধার করে।

পুলিশ সুপারের প্রতিশ্রুতি

ঘটনার রহস্য উদঘাটন ও আলামত উদ্ধার করায় পুলিশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। মৌলভীবাজার জেলা পুলিশ জানিয়েছে, এ হত্যাকাণ্ডের বিচার দ্রুততার সঙ্গে নিশ্চিত করতে সব ধরনের আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/dainikprohor/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471