ঢাকা ০৪:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঈদেও সীমান্ত পাহারায় বিজিবি, দেশ আগে, তারপর পরিবার বললেন বিজিবির সদস্যরা।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

 

ঈদের খুশি যখন ঘরে ঘরে, তখনও দেশের সীমান্তে টহলরত বিজিবি সদস্যদের কাছে দিনটি অন্যান্য দিনের মতোই দায়িত্ব, সতর্কতা ও ত্যাগের মহিমায় ভরা। এরই ধারাবাহিকতায় হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (৫৫ বিজিবি) ১০৩ কিঃ মিঃ বর্ডার এলাকায় অবস্থিত ১৬টি বিওপির প্রতিটি বিওপিতে ঈদের দিনেও নিরবচ্ছিন্ন সীমান্ত নজরদারি ও অপারেশনাল কার্যক্রম অব্যাহত ছিল।

চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী বাল্লা বিওপিতে ঈদের দিন সকাল থেকেই ছিল বিশেষ নজরদারি। সেখানে দায়িত্বে পালনরত বিওপি কমান্ডার নায়েব সুবেদার মোঃ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “ঈদের নামাজও আমাদের দুই ভাগে পড়তে হয়, কারণ দায়িত্বে যেন ব্যত্যয় না হয়। আমাদের সবার পক্ষে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির সুযোগ হয় না, কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি ‘সবার আগে দেশ, তারপর পরিবার’।

চাকুরীর দীর্ঘ ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নায়েব সুবেদার মোঃ তোফাজ্জল হোসেন আরো জানান, চাকুরী জীবনে অন্তত ২০টি ঈদ তিনি পরিবার থেকে দূরে কাটিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে তার মধ্যে বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই বরং রয়েছে গর্ব। সহকর্মীদের সঙ্গে যে বন্ধন, তাই হয়ে ওঠে নতুন পরিবার। তার ভাষায়, এই আত্মিক শক্তিই আমাদের এগিয়ে নেয় দেশ মাতৃকার সেবায়।”

এছাড়াও, মনতলা বিওপি কমান্ডার নায়েব সুবেদার জাফরুল্লাও একই অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, “দেশের প্রতিটি মানুষই আমাদের আপনজন। সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করে তাদের নিরাপত্তা দেওয়াই আমাদের সবচেয়ে বড় ঈদ উপহার।” ঈদের সময় ৫৫ বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্তে বিশেষ নজরদারি ও অতিরিক্ত টহলের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সীমান্তবর্তী জনসাধারনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি সর্বদাই প্রস্তুত থাকে।

সরাইল রিজিয়নের শ্রীমঙ্গল সেক্টরের অধীনে হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন পাহাড়ি বনাঞ্চল, টিলা আর চা-বাগান ও দুর্গম সীমান্ত এলাকাগুলোতে সারা বছরই বিজিবি’র কার্যক্রম পরিচালনা করে। ঈদের সময়ও কোনো ছন্দপতন ঘটে না। রেমা, কালেঙ্গা ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে সংলগ্ন এলাকায় চোরাকারবারীরা সুযোগ খোঁজে, তবে বিজিবি’র সজাগ দৃষ্টিতে তাদের সকল অপতৎপরতা প্রতিহত করা হয়।

এই প্রসঙ্গে ৫৫ বিজিবি’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ তানজিলুর রহমান বলেন, “বিজিবি’র প্রতিটি সদস্য জানেন ঈদের আনন্দ তখনই পূর্ণতা পায়, যখন দেশের সীমান্ত নিরাপদ থাকে। পরিবার থেকে দূরে থাকা কষ্টের, কিন্তু এই ত্যাগের মাঝেই আছে গর্ব ও দেশ প্রেম। বিজিবি’র অন্যান্য ব্যাটালিয়নের মতোই ৫৫ বিজিবি’র সদস্যরা একে অপরের পরিবার হয়ে এই দিনগুলো পার করেন। তাঁদের এই নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগ আমাদের অনুপ্রেরণা। একজন অধিনায়ক হিসেবে আমি তাঁদের জন্য গর্বিত।”

৫৫ বিজিবি’র তত্ত্বাবধানে এ বছরে ১৭ কোটি ৭৪ লক্ষ ৫৭ হাজার ৯১৯ টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকার চোরাচালানি ও মাদকদ্রব্য আটক করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় ঈদের দিনেও সাতছড়ি এবং তেলিয়াপাড়া বিওপি চোরাচালানী অভিযান চালিয়ে ৩৪ লাখ ৪১ হাজার ২৫০ টাকা মূল্যের ভারতীয় বিভিন্ন প্রকার শাড়ি, ১০৮ কেজি গাঁজা, ০৭ বোতল বিয়ার এবং ০১ বোতল মদ জব্দ করে।

হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (৫৫ বিজিবি) এর এই নীরব অথচ গভীর দেশসেবার প্রতিচ্ছবি ঈদের দিনেও আমাদের মনে করিয়ে দেয় “সবার আগে দেশ”।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ১০:৫৫:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫
৯ বার পড়া হয়েছে

ঈদেও সীমান্ত পাহারায় বিজিবি, দেশ আগে, তারপর পরিবার বললেন বিজিবির সদস্যরা।

আপডেট সময় ১০:৫৫:২২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৮ জুন ২০২৫

 

ঈদের খুশি যখন ঘরে ঘরে, তখনও দেশের সীমান্তে টহলরত বিজিবি সদস্যদের কাছে দিনটি অন্যান্য দিনের মতোই দায়িত্ব, সতর্কতা ও ত্যাগের মহিমায় ভরা। এরই ধারাবাহিকতায় হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (৫৫ বিজিবি) ১০৩ কিঃ মিঃ বর্ডার এলাকায় অবস্থিত ১৬টি বিওপির প্রতিটি বিওপিতে ঈদের দিনেও নিরবচ্ছিন্ন সীমান্ত নজরদারি ও অপারেশনাল কার্যক্রম অব্যাহত ছিল।

চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্তবর্তী বাল্লা বিওপিতে ঈদের দিন সকাল থেকেই ছিল বিশেষ নজরদারি। সেখানে দায়িত্বে পালনরত বিওপি কমান্ডার নায়েব সুবেদার মোঃ তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “ঈদের নামাজও আমাদের দুই ভাগে পড়তে হয়, কারণ দায়িত্বে যেন ব্যত্যয় না হয়। আমাদের সবার পক্ষে পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির সুযোগ হয় না, কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি ‘সবার আগে দেশ, তারপর পরিবার’।

চাকুরীর দীর্ঘ ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নায়েব সুবেদার মোঃ তোফাজ্জল হোসেন আরো জানান, চাকুরী জীবনে অন্তত ২০টি ঈদ তিনি পরিবার থেকে দূরে কাটিয়েছেন। কিন্তু এ নিয়ে তার মধ্যে বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই বরং রয়েছে গর্ব। সহকর্মীদের সঙ্গে যে বন্ধন, তাই হয়ে ওঠে নতুন পরিবার। তার ভাষায়, এই আত্মিক শক্তিই আমাদের এগিয়ে নেয় দেশ মাতৃকার সেবায়।”

এছাড়াও, মনতলা বিওপি কমান্ডার নায়েব সুবেদার জাফরুল্লাও একই অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, “দেশের প্রতিটি মানুষই আমাদের আপনজন। সীমান্ত সুরক্ষা নিশ্চিত করে তাদের নিরাপত্তা দেওয়াই আমাদের সবচেয়ে বড় ঈদ উপহার।” ঈদের সময় ৫৫ বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্তে বিশেষ নজরদারি ও অতিরিক্ত টহলের ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সীমান্তবর্তী জনসাধারনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি সর্বদাই প্রস্তুত থাকে।

সরাইল রিজিয়নের শ্রীমঙ্গল সেক্টরের অধীনে হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের আওতাধীন পাহাড়ি বনাঞ্চল, টিলা আর চা-বাগান ও দুর্গম সীমান্ত এলাকাগুলোতে সারা বছরই বিজিবি’র কার্যক্রম পরিচালনা করে। ঈদের সময়ও কোনো ছন্দপতন ঘটে না। রেমা, কালেঙ্গা ও সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে সংলগ্ন এলাকায় চোরাকারবারীরা সুযোগ খোঁজে, তবে বিজিবি’র সজাগ দৃষ্টিতে তাদের সকল অপতৎপরতা প্রতিহত করা হয়।

এই প্রসঙ্গে ৫৫ বিজিবি’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোঃ তানজিলুর রহমান বলেন, “বিজিবি’র প্রতিটি সদস্য জানেন ঈদের আনন্দ তখনই পূর্ণতা পায়, যখন দেশের সীমান্ত নিরাপদ থাকে। পরিবার থেকে দূরে থাকা কষ্টের, কিন্তু এই ত্যাগের মাঝেই আছে গর্ব ও দেশ প্রেম। বিজিবি’র অন্যান্য ব্যাটালিয়নের মতোই ৫৫ বিজিবি’র সদস্যরা একে অপরের পরিবার হয়ে এই দিনগুলো পার করেন। তাঁদের এই নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগ আমাদের অনুপ্রেরণা। একজন অধিনায়ক হিসেবে আমি তাঁদের জন্য গর্বিত।”

৫৫ বিজিবি’র তত্ত্বাবধানে এ বছরে ১৭ কোটি ৭৪ লক্ষ ৫৭ হাজার ৯১৯ টাকা মূল্যের বিভিন্ন প্রকার চোরাচালানি ও মাদকদ্রব্য আটক করা হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় ঈদের দিনেও সাতছড়ি এবং তেলিয়াপাড়া বিওপি চোরাচালানী অভিযান চালিয়ে ৩৪ লাখ ৪১ হাজার ২৫০ টাকা মূল্যের ভারতীয় বিভিন্ন প্রকার শাড়ি, ১০৮ কেজি গাঁজা, ০৭ বোতল বিয়ার এবং ০১ বোতল মদ জব্দ করে।

হবিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (৫৫ বিজিবি) এর এই নীরব অথচ গভীর দেশসেবার প্রতিচ্ছবি ঈদের দিনেও আমাদের মনে করিয়ে দেয় “সবার আগে দেশ”।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/dainikprohor/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471