তিনদিন আন্দোলনের পর শনিবার ছাত্র জনতার উল্লাস।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে তিন দিন অবস্থান করে ছাত্র-জনতা। জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র নেতৃত্বের ডাকে সাড়া দিয়ে গতকাল শনিবারও দিনভর চলে বিভিন্ন দল ও সংগঠনের বিক্ষোভ। তবে রাতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের ঘোষণা আসার পরপরই শুরু হয় আনন্দ মিছিল। তখন উল্লাসে মাতে ছাত্র-জনতা।
সন্ধ্যায় শাহবাগ থেকে ‘মার্চ টু যমুনা’ ঘোষণা করে আন্দোলনকারীরা ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের মোড়ে অবস্থান নেন।
তাদের দাবি ছিল, সরকারের নির্বাহী সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করতে হবে। তবে সরকার দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের পথ খুলতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে এবং বিচারকাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দলটির কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।
এ ঘোষণা ছাত্র-জনতার কাছে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনকারীরা ‘নিষিদ্ধ’ ‘নিষিদ্ধ’ স্লোগানে উল্লাস করে। অনেকে বিজয়ের ভি চিহ্ন দেখান। এর মধ্যেও অনেকে বলতে থাকেন, ঘোষণাপত্র ছাড়া জনতা মাঠ ছাড়বে না।
এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংগঠক হামজা মাহবুব বলেন, ‘আমাদের দাবি তিন দফা। এগুলো আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো আনন্দ প্রতিক্রিয়া নেই।’ আন্দোলনরত নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যেভাবে ছাত্র-জনতার ওপর গণহত্যা করেছে, তারা আর রাজনীতি করার যোগ্য না। সরকারের সিদ্ধান্ত সঠিক। তাদের আর কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া উচিত হবে না। বাকি দাবিগুলোও মেনে নেওয়া উচিত।’ আরেক আন্দোলনকারী বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, বহু কষ্টের পর বিজয়।’
হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে ব্যারিকেডের বিপরীত পাশে ছিল পুলিশ। অনেককে ব্যারিকেডের পাশে এসে ভি চিহ্ন দেখিয়ে উল্লাস করতে দেখা যায়। অনেকে ছবি তোলেন। হাততালি, স্লোগান, পানির বোতলে আওয়াজ তুলে উল্লাসে মেতে ওঠেন তারা।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে মিনি ট্রাকে তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার প্রতিক্রিয়ায় হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমাদের তিন দাবি বাস্তবায়িত হয়নি। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার আগে কেউ রাজপথ ছাড়বেন না। ঢাকাবাসী আপনারা রাজপথে নেমে আসুন।’
এ সময় জুলাই ঐক্যের মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে নিষিদ্ধ করতে হবে। শুধু কার্যক্রম নিষিদ্ধের মুলা ঝুলিয়ে আমাদের থামানো যাবে না।’
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত অফিসিয়ালি আমরা মতামত না জানাচ্ছি, কেউ রাজপথ ছাড়বেন না। হাসনাতসহ আমরা আলোচনায় বসব।’ নবগঠিত আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘জুলাই ঘোষণা ৩০ দিনের মধ্যে দিতে হবে।’
এ সময় আরও কথা বলেন এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক রিফাত রশীদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা ইসহাক প্রমুখ। এরপর অনেকে ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে অবস্থান চালিয়ে যান। অনেকে আবার শাহবাগের দিকে ফিরে যান। বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে পৃথক পৃথক স্লোগান দেওয়া হয়।
এর আগে তিন দাবিতে গতকাল সকাল থেকে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি করেন এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী।
বিকেলে সেখানে হয় গণজমায়েত। নেতাকর্মী অবস্থানের কারণে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বন্ধ ছিল শাহবাগ এলাকার সড়ক। কাঁটাবন মোড় ও মৎস্য ভবন মোড়ের সড়কও দিনভর বন্ধ ছিল। তবে অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরি যানবাহন চলাচলের সুযোগ দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
গত বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ করার দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে রাতভর অবস্থান এবং মিন্টো রোডের মোড়ে মঞ্চ তৈরি করে বিক্ষোভ করে ছাত্র-জনতা। পরদিন বিকেল থেকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন এনসিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতাকর্মী।