ঢাকা ১২:০৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে বসানোর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সমর্থকরা।

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবন তিন দিন ধরে অবরুদ্ধ। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে বসানোর দাবিতে গতকাল শনিবারও হাজার হাজার মানুষ নগর ভবন ঘেরাও করেন। সকালে নগর ভবনের সব ফটকে তালা দিয়ে সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দেন তারা। এ সময় ওই ভবনে থাকা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীও কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি। আন্দোলনকারীরা এ দু’জনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দেন। আজ রোববারও নগর ভবন অবরুদ্ধ করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

এ পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে ইশরাক হোসেন বলেছেন, ‘আমাকে মেয়র পদে বসানোর জন্য এটা নগরবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন। এই আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততা নেই। আমি নিজেও মেয়র হিসেবে শপথ নিতে প্রস্তুত। তবে সরকার এ নিয়ে গড়িমসি করছে। ঢাকাবাসী এটা মেনে নেবে না।’
২০২০ সালে ডিএসসিসি নির্বাচনে হারলে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ইশরাক হোসেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। গত ২৭ মার্চ আদালত তাঁকে বিজয়ী ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) গেজেট প্রকাশ করে। এরপর ইশরাকের শপথ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের তোড়জোড় শুরু হয়। পরে এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলে শপথ কার্যক্রম ঝুলে যায়। এ নিয়ে আজ রোববার আদালতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
২০২০ সালের ২ জুন ডিএসসিসির দ্বিতীয় পর্ষদের প্রথম বোর্ড সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য মেয়র পদে থাকার বিধান রয়েছে। সে হিসাবে আগামী ২ জুন দ্বিতীয় পর্ষদের মেয়াদ শেষ হবে। এ সময়ের মধ্যে শপথ নিতে না পারলে ইশরাকের আর ডিএসসিসির মেয়র হওয়ার সুযোগ থাকবে না। এ জন্যই ইশরাকের ইশারায় তাঁর অনুসারীরা জোর আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে চাউর রয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান সমকালকে বলেন, এরই মধ্যে মেয়র-কাউন্সিলরদের বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বরখাস্ত মানেই পর্ষদেরও বিলুপ্তি। তবে এখন বিষয়টি চলছে সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। ফলে যে ক্ষতিটা হচ্ছে, সেটা নগরবাসীর। কারণ, দিনের পর দিন নগর ভবন অবরুদ্ধ থাকার কারণে নাগরিকরা যে কত ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তা কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। এখন দেখা যাক, আদালত কী রায় দেন।
ইশরাককে মেয়র পদে না বসানোর প্রতিবাদে ‘আমরা ঢাকাবাসী’র ব্যানারে গতকাল সকালেই কয়েক হাজার মানুষ নগর ভবনের সামনে জমায়েত হয়ে সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ শুরু করেন। লংমার্চটি জিরো পয়েন্ট হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে শিক্ষা ভবন ঘুরে আবার নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। বিক্ষোভকারীরা ‘আসিফের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘অবিলম্বে ইশরাকের শপথ চাই, দিতে হবে’, ‘জনতার মেয়র ইশরাক ভাই, অন্য কোনো মেয়র নাই’– এমন নানা স্লোগান দিতে থাকেন। সাবেক সিনিয়র সচিব মসিউর রহমানের নেতৃত্বে গত বুধবার থেকে এ আন্দোলন চলছে। গতকাল এ কর্মসূচিতে ডিএসসিসির সাধারণ কর্মচারীরাও একাত্মতা প্রকাশ করেন।
যাত্রাবাড়ী থেকে আসা নাসরিন আক্তার বলেন, ‘ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট পাস হলেও তাঁকে শপথ পড়ানো হচ্ছে না। অবিলম্বে তাঁকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে আমরা সচিবালয় ঘেরাও করতে এসেছি।’ পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যদি ইশরাককে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া হয়, আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৮:৫৯:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
১০ বার পড়া হয়েছে

ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে বসানোর দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সমর্থকরা।

আপডেট সময় ০৮:৫৯:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবন তিন দিন ধরে অবরুদ্ধ। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে বসানোর দাবিতে গতকাল শনিবারও হাজার হাজার মানুষ নগর ভবন ঘেরাও করেন। সকালে নগর ভবনের সব ফটকে তালা দিয়ে সেবা কার্যক্রম বন্ধ করে দেন তারা। এ সময় ওই ভবনে থাকা স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমও পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও সচিব রেজাউল মাকছুদ জাহেদীও কার্যালয়ে ঢুকতে পারেননি। আন্দোলনকারীরা এ দু’জনকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের প্রতিহত করার হুঁশিয়ারি দেন। আজ রোববারও নগর ভবন অবরুদ্ধ করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।

এ পরিস্থিতির মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে ইশরাক হোসেন বলেছেন, ‘আমাকে মেয়র পদে বসানোর জন্য এটা নগরবাসীর স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলন। এই আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির সম্পৃক্ততা নেই। আমি নিজেও মেয়র হিসেবে শপথ নিতে প্রস্তুত। তবে সরকার এ নিয়ে গড়িমসি করছে। ঢাকাবাসী এটা মেনে নেবে না।’
২০২০ সালে ডিএসসিসি নির্বাচনে হারলে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ইশরাক হোসেন নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। গত ২৭ মার্চ আদালত তাঁকে বিজয়ী ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) গেজেট প্রকাশ করে। এরপর ইশরাকের শপথ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের তোড়জোড় শুরু হয়। পরে এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হলে শপথ কার্যক্রম ঝুলে যায়। এ নিয়ে আজ রোববার আদালতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।
২০২০ সালের ২ জুন ডিএসসিসির দ্বিতীয় পর্ষদের প্রথম বোর্ড সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য মেয়র পদে থাকার বিধান রয়েছে। সে হিসাবে আগামী ২ জুন দ্বিতীয় পর্ষদের মেয়াদ শেষ হবে। এ সময়ের মধ্যে শপথ নিতে না পারলে ইশরাকের আর ডিএসসিসির মেয়র হওয়ার সুযোগ থাকবে না। এ জন্যই ইশরাকের ইশারায় তাঁর অনুসারীরা জোর আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বলে চাউর রয়েছে।
তবে এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সাবেক সচিব আবু আলম শহীদ খান সমকালকে বলেন, এরই মধ্যে মেয়র-কাউন্সিলরদের বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের বরখাস্ত মানেই পর্ষদেরও বিলুপ্তি। তবে এখন বিষয়টি চলছে সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। ফলে যে ক্ষতিটা হচ্ছে, সেটা নগরবাসীর। কারণ, দিনের পর দিন নগর ভবন অবরুদ্ধ থাকার কারণে নাগরিকরা যে কত ধরনের সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, তা কেউ গুরুত্ব দিচ্ছে না। এখন দেখা যাক, আদালত কী রায় দেন।
ইশরাককে মেয়র পদে না বসানোর প্রতিবাদে ‘আমরা ঢাকাবাসী’র ব্যানারে গতকাল সকালেই কয়েক হাজার মানুষ নগর ভবনের সামনে জমায়েত হয়ে সচিবালয় অভিমুখে লংমার্চ শুরু করেন। লংমার্চটি জিরো পয়েন্ট হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে দিয়ে শিক্ষা ভবন ঘুরে আবার নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে। বিক্ষোভকারীরা ‘আসিফের কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘শপথ নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘অবিলম্বে ইশরাকের শপথ চাই, দিতে হবে’, ‘জনতার মেয়র ইশরাক ভাই, অন্য কোনো মেয়র নাই’– এমন নানা স্লোগান দিতে থাকেন। সাবেক সিনিয়র সচিব মসিউর রহমানের নেতৃত্বে গত বুধবার থেকে এ আন্দোলন চলছে। গতকাল এ কর্মসূচিতে ডিএসসিসির সাধারণ কর্মচারীরাও একাত্মতা প্রকাশ করেন।
যাত্রাবাড়ী থেকে আসা নাসরিন আক্তার বলেন, ‘ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট পাস হলেও তাঁকে শপথ পড়ানো হচ্ছে না। অবিলম্বে তাঁকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে আমরা সচিবালয় ঘেরাও করতে এসেছি।’ পুরান ঢাকার সূত্রাপুরের আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘যদি ইশরাককে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়া হয়, আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/dainikprohor/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471