ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলেন কুলাউড়া বরমচাল চা-বাগানের ইতি।
মৌলভীবাজার প্রতিনিধিঃ
চা-শ্রমিক পরিবারের মেয়ে ইতি গৌড় (১৯) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। তিনি ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। এর আগে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ বিভাগেও সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ইতিদের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা-বাগানের ডিপো লাইনে। ওই বাগান থেকে এর আগে কেউ কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাননি। তিন বোনের মধ্যে ইতি সবচেয়ে ছোট।
ইতির মা সুমিত্রা গৌড় ছিলেন চা-শ্রমিক। প্রায় দুই বছর আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। বাবা শংকর গৌড় বাপেক্সের স্থানীয় গ্যাসক্ষেত্রে নিরাপত্তাকর্মীর কাজ করতেন। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগে আক্রান্ত হলে ২০১৮ সালে চাকরি ছাড়তে হয় তাঁকে। বর্তমানে তিনিও অসুস্থ।
প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন বরমচাল মিশন স্কুল থেকে। এরপর ভর্তি হন বরমচাল উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজে। ২০২২ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৪ দশমিক ৬৭ এবং ২০২৪ সালে ইউছুফ-গণি কলেজ থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে এইচএসসিতে জিপিএ ৪ দশমিক ৮৩ পান।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ইতি বলেন, ‘আগে ভালোভাবে লেখাপড়া শেষ করতে চাই। ভালো রেজাল্ট হলে চাকরি পাওয়া কঠিন হবে না। ফিন্যান্সের পড়া শেষ করে চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট বিষয়ে পড়ার ইচ্ছা আছে।’
মেয়ের এ সাফল্যে খুশি বাবা শংকর গৌড়। তিনি বলেন, ‘বাপেক্সে চাকরি করার সময় বড় বড় স্যার আসতেন, যাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন। তখন ভাবতাম, যদি আমাদের কোনো মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারত! ঈশ্বর সেই ইচ্ছা পূরণ করেছেন। সুমিত্রা (স্ত্রী) নিশ্চয়ই অনন্তলোক থেকে মেয়েদের জন্য আশীর্বাদ করছেন।’
ইতিকে বাগানের ‘আলো’ বলছেন বরমচাল বাগানের বাসিন্দা ও শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী নিত্যানন্দ দাস। তিনি বলেন, ‘এই বাগান থেকে আগে কেউ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেনি। নিজের মেধা ও পরিশ্রমে ইতি পেরেছে। তার জন্য সবার শুভকামনা আছে।’
#