ঢাকা ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁওয়ে রেলওয়ের উচ্ছেদ অভিযানের আড়ালে ঘুষ বাণিজ্য।

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:

 

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের দুইপাশে গড়ে ওঠা তিন শতাধিক অবৈধ দোকানপাট ও বসতবাড়ি মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দিয়েছে রেলওয়ে ও প্রশাসন। প্রায় পাঁচ একর জমি উদ্ধার হলেও এর ঠিক দুইদিন আগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের ঘুষ নেয়ার অভিযোগে তীব্র বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

চার ঘণ্টায় উচ্ছেদ, কিন্তু দুইদিন আগে ছিল টাকার বাণিজ্য

সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলা এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও ডেপুটি কমিশনার (রেলওয়ে ভূমি ও ইমারত) মো. নাসির উদ্দিন মাহমুদ। সেনাবাহিনী, রেলওয়ে, জেলা পুলিশ, জিআরপি এবং প্রশাসনের এক যৌথ বাহিনী অংশ নেয়।
বুলডোজার দিয়ে আমরাইলছড়া রোড, সিন্দুরখান রোড, রেলওয়ে কলোনী ও সাতগাঁও বাজারের স্থাপনা ধ্বংস করা হয়—এমনকি একটি বিলাসবহুল বাসাও রেহাই পায়নি।

কিন্তু অভিযানের আগে থেকেই স্থানীয় বাজারে গুঞ্জন চলছিল—স্থাপনা বাঁচাতে মোটা অঙ্কের টাকা ‘নিচতলার’ কর্মকর্তাদের হাতে যাচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, উচ্ছেদের ঘোষণার পর রেলওয়ের সার্ভেয়ার দীপক মল্লিক ও কানুনগো কাওসার হামিদ দোকানের অবস্থান ও আয়তন অনুযায়ী ঘুষের ‘রেট লিস্ট’ বানান—যা ৫০ হাজার থেকে শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ৭ লাখ টাকায় পৌঁছায়। টাকা নিলে দোকান বা ঘর উচ্ছেদের তালিকা থেকে নাম কেটে দেয়া হবে—এমন প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।

দৈনিক আমার দেশ-এর হাতে থাকা একটি অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, ব্যবসায়ী রিপন স্বপনের দোকান রক্ষায় দীপক মল্লিককে ৭ লাখ টাকার প্রস্তাব দেন। দীপক তাকে ইঞ্জিনিয়ার রাসেলের মাধ্যমে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
অন্য এক রেকর্ডে গিয়াস উদ্দিন তার দুই সাটারের দোকান বাঁচাতে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করার কথা জানান। এবং অন্যান্য ব্যবসায়িদের কাছ থেকে ঘুস নেয়ার বর্ননা দেন। গিয়াস জানান, খাজনা বাকি থাকা রেলের দোকানদার কাজী দুলাল ১ লাখ ২০ হাজার, উমর আলী ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
এছাড়া রেলওয়ে কলোনীর না ভাঙ্গার জন্য গেদা মিয়ার কাছে দাবি ওঠে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার।

‘মধ্যস্থ’দের ভূমিকা ও রেস্ট হাউজে লেনদেন

অভিযোগ রয়েছে, এই টাকা লেনদেনের বড় অংশই হয়েছে অভিযানের দুইদিন আগে—শনিবার ও রবিবার—শ্রীমঙ্গলের রেলওয়ে রেস্ট হাউজে বসে। কেউ সরাসরি টাকা দিয়েছেন, আবার কেউ ‘বিশ্বস্ত মধ্যস্থ’দের মাধ্যমে অর্থ দিতে বাধ্য হয়েছেন।
জানতে চাইলে রেলওয়ের সার্ভেয়ার
দীপক মল্লিক ও কানুনগো কাওসার হামিদ ঘুষ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা শুধু বানিজ্যিক লাইসেন্সের খাজনা ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ করেছেন এবং সাতগাঁও ছাড়াও মাইজগাঁও, শমশেরনগর ও অন্যান্য এলাকার লোকজনও এসেছিলেন।

ট্যাগস :

নিউজটি শেয়ার করুন

আপডেট সময় ০৮:০১:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫
২ বার পড়া হয়েছে

শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁওয়ে রেলওয়ের উচ্ছেদ অভিযানের আড়ালে ঘুষ বাণিজ্য।

আপডেট সময় ০৮:০১:২৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫

 

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের সাতগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের দুইপাশে গড়ে ওঠা তিন শতাধিক অবৈধ দোকানপাট ও বসতবাড়ি মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বুলডোজারে গুঁড়িয়ে দিয়েছে রেলওয়ে ও প্রশাসন। প্রায় পাঁচ একর জমি উদ্ধার হলেও এর ঠিক দুইদিন আগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ দখলদারদের কাছ থেকে বিপুল অঙ্কের ঘুষ নেয়ার অভিযোগে তীব্র বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

চার ঘণ্টায় উচ্ছেদ, কিন্তু দুইদিন আগে ছিল টাকার বাণিজ্য

সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত চলা এই অভিযানে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ রেলওয়ের বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ও ডেপুটি কমিশনার (রেলওয়ে ভূমি ও ইমারত) মো. নাসির উদ্দিন মাহমুদ। সেনাবাহিনী, রেলওয়ে, জেলা পুলিশ, জিআরপি এবং প্রশাসনের এক যৌথ বাহিনী অংশ নেয়।
বুলডোজার দিয়ে আমরাইলছড়া রোড, সিন্দুরখান রোড, রেলওয়ে কলোনী ও সাতগাঁও বাজারের স্থাপনা ধ্বংস করা হয়—এমনকি একটি বিলাসবহুল বাসাও রেহাই পায়নি।

কিন্তু অভিযানের আগে থেকেই স্থানীয় বাজারে গুঞ্জন চলছিল—স্থাপনা বাঁচাতে মোটা অঙ্কের টাকা ‘নিচতলার’ কর্মকর্তাদের হাতে যাচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী সূত্রে জানা যায়, উচ্ছেদের ঘোষণার পর রেলওয়ের সার্ভেয়ার দীপক মল্লিক ও কানুনগো কাওসার হামিদ দোকানের অবস্থান ও আয়তন অনুযায়ী ঘুষের ‘রেট লিস্ট’ বানান—যা ৫০ হাজার থেকে শুরু হয়ে সর্বোচ্চ ৭ লাখ টাকায় পৌঁছায়। টাকা নিলে দোকান বা ঘর উচ্ছেদের তালিকা থেকে নাম কেটে দেয়া হবে—এমন প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়।

দৈনিক আমার দেশ-এর হাতে থাকা একটি অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, ব্যবসায়ী রিপন স্বপনের দোকান রক্ষায় দীপক মল্লিককে ৭ লাখ টাকার প্রস্তাব দেন। দীপক তাকে ইঞ্জিনিয়ার রাসেলের মাধ্যমে যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
অন্য এক রেকর্ডে গিয়াস উদ্দিন তার দুই সাটারের দোকান বাঁচাতে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা প্রদান করার কথা জানান। এবং অন্যান্য ব্যবসায়িদের কাছ থেকে ঘুস নেয়ার বর্ননা দেন। গিয়াস জানান, খাজনা বাকি থাকা রেলের দোকানদার কাজী দুলাল ১ লাখ ২০ হাজার, উমর আলী ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েছেন।
এছাড়া রেলওয়ে কলোনীর না ভাঙ্গার জন্য গেদা মিয়ার কাছে দাবি ওঠে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার।

‘মধ্যস্থ’দের ভূমিকা ও রেস্ট হাউজে লেনদেন

অভিযোগ রয়েছে, এই টাকা লেনদেনের বড় অংশই হয়েছে অভিযানের দুইদিন আগে—শনিবার ও রবিবার—শ্রীমঙ্গলের রেলওয়ে রেস্ট হাউজে বসে। কেউ সরাসরি টাকা দিয়েছেন, আবার কেউ ‘বিশ্বস্ত মধ্যস্থ’দের মাধ্যমে অর্থ দিতে বাধ্য হয়েছেন।
জানতে চাইলে রেলওয়ের সার্ভেয়ার
দীপক মল্লিক ও কানুনগো কাওসার হামিদ ঘুষ নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা শুধু বানিজ্যিক লাইসেন্সের খাজনা ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ করেছেন এবং সাতগাঁও ছাড়াও মাইজগাঁও, শমশেরনগর ও অন্যান্য এলাকার লোকজনও এসেছিলেন।


Notice: ob_end_flush(): failed to send buffer of zlib output compression (0) in /home2/dainikprohor/public_html/wp-includes/functions.php on line 5471